মোঃ মজিবর রহমান শেখ,
বিএনপির সংসদ সদস্যের পদত্যাগের কারণে শূন্য হওয়া ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসনটি ১৪ দলের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টিকে ছেড়ে দিয়েছে আওয়ামী লীগ। এখানে প্রার্থী হয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াসিন আলী। তিনি এবার হাতুড়ি প্রতীকে নির্বাচন করছেন। তাঁর সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য হাফিজউদ্দীন আহম্মেদ, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির শাফি আল আসাদ, বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্টির সিরাজুল ইসলাম ও জাকের পার্টির এমদাদুল হক ও উপজেলা আ.লীগের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ গোপাল চন্দ্র রায় (স্বতন্ত্র)। ঠাকুরগাঁও-৩ (পীরগঞ্জ-রানীশংকৈল আংশিক) সংসদীয় আসনের উপনির্বাচনে অবশেষে ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন আলীর প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ইয়াসিন আলীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিতে বর্ধিত সভাও করেছে দলটি। পাশাপাশি দলটির নেতারা ইউনিয়নে ইউনিয়নে গিয়ে পথসভায় বক্তব্যও দিয়েছেন। রাণীশংকৈল ও পীরগঞ্জ উপজেলায় নির্বাচনী প্রচার প্রচারণা ও পথসভা করেছেন, ভোটারদের দ্বারে দ্বারেও ঘুরছেন আ.লীগসহ অন্য শরিক দলের নেতা-কর্মীরা। কিছুদিন আগেও ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ইয়াসিন আলীর প্রচারণায় দেখা যায়নি শরিক দল আ.লীগের কোন নেতা-কর্মীদের।
সবশেষে আ.লীগ নেতাকর্মীদের সমর্থন সম্পর্কে ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থী ইয়াছিন আলী অভিযোগ করেছিলেন যেমনটি থাকার কথা ছিল আ.লীগ সেভাবে এখনো মাঠে নেই তারা। দু’চারটা কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করলেও স্বতঃস্ফূর্ত নন। রাণীশংকৈলে তো আ.লীগ মাত্র কয়দিন আগে নেমেছে মাঠে। আর পীরগঞ্জে যৌথভাবে প্রচারণা করার পরিকল্পনা করছে আগে থেকেই। এখনও আ.লীগ পাশে থাকলে আমরা অবশ্যই জয় লাভ করব। এদিকে জোটের প্রার্থীর জয় সুনিশ্চিত করতে বৈঠক করেন ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ান হক ও উপজেলা ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি আবু জায়েদ জুয়েল। রেজওয়ান জুয়েল মুঠোফোনে বলেন জোটের প্রার্থীকে বিজয় করতে আমরা সব ধরনের চেষ্টা করে যাব। অন্যদিকে আবু জায়েদ জুয়েল জানান আমাদের মধ্যে যে সমন্নয়হীনতা ছিল তা কেটে গেছে। আমরা ১৪ দলের সব শরিক একসঙ্গে নির্বাচনের প্রচারণাসহ সব কার্যক্রম চালাচ্ছি। দলীয় নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ২০১৪ সালের সংসদ নির্বাচনে এই আসন থেকে নির্বাচিত হয়েছিলেন ইয়াসিন আলী। ২০১৮ সালের নির্বাচনেও তিনি ১৪ দলের প্রার্থী ছিলেন। সেই বার নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করেন। নির্বাচনে আ.লীগের মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র হিসেবে পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমদাদুল হক প্রার্থী হন। আ.লীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরা ইমদাদুল হকের পক্ষে কাজ করেন। এতে ইয়াসিন আলী বিএনপির প্রার্থী জাহিদুর রহমানের কাছে বিপুল ভোটে পারজিত হন। দীর্ঘদিন দলের প্রার্থী না পাওয়ায় স্থানীয় আ.লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে। জাপা-ওয়ার্কার্স পার্টি মাঠে, দলীয় সিদ্ধান্ত মানবেন আ.লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশীরা। আওয়ামী লীগের তৃণমূলের কয়েকজন নেতা-কর্মী বলেন, এই আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির ভোট খুবই সামান্য। এরপরও ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনে ইয়াসিন আলীকে ১৪ দলের প্রার্থী করা হয়। নির্বাচনে আ.লীগের নেতা-কর্মীরা তাঁর পাশে থেকে তাঁকে বিজয়ী করেন। কিন্তু বিজয়ী হয়ে তিনি আ.লীগের তৃণমূল নেতা-কর্মীর মূল্যায়ন করেননি। সে কারণে ২০১৮ সালে তাঁকে আবার মনোনয়ন দেওয়ায় আ.লীগের কর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী ইমদাদুল হকের পক্ষে অবস্থান নেন। উপনির্বাচনে এবারও ইয়াসিন আলীকে ১৪ দলের প্রার্থী করার বিষয়টি ঠাকুরগাঁও-৩ আসনের আ.লীগের নেতা-কর্মীরা মন থেকে মেনে নিতে পারেননি। তবে সরাসরি বিরোধিতা না করলেও তাঁদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ ছিলোনা। তবে এখন ইয়াসিন আলীর প্রচারণায় নেমেছেন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ৫ জানুয়ারি মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দিন ইয়াসিন আলীর সঙ্গে ছিলেন পীরগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ইমদাদুল হক ও সাধারণ সম্পাদক রেজওয়ানুল হক। আর রানীশংকৈলে ইয়াসিন আলীর হাতুড়ি প্রতীকের নির্বাচনী কার্যালয় উদ্বোধনের দিন সেখানে রানীশংকৈল উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সইদুল হক বক্তব্য দেন। এর বাইরে আওয়ামী লীগের কোনো নেতা-কর্মীকে হাতুড়ি প্রতীকের পক্ষে তেমন কাজ করতে দেখা যায়নি।
এদিকে ১৪ দলীয় জোটের প্রার্থী ইয়াসিন আলীর বিজয় সুনিশ্চিতে সহযোগিতার জন্য ঠাকুরগাঁও জেলা আ.লীগের সভাপতি মু. সাদেক কুরাইশীকে একটি চিঠি দেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
রানীশংকৈল পৌর শহরের আওয়ামী লীগের অনেক কর্মী বলেন, ‘পীরগঞ্জ ও রানীশংকৈল উপজেলা নৌকার ঘাঁটি হওয়ার পরও আমরা দীর্ঘদিন দলের প্রার্থী পাচ্ছি না। তা ছাড়া ১৪ দল যাকে মনোনয়ন দিয়েছে, তার ওপর আমাদের ভরসা নেই। এ কারণে দলের নেতা-কর্মীরা তাঁর সঙ্গে সেভাবে ছিলোনা।’
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও ঠাকুরগাঁও- ৩ আসনের রিটার্নিং অফিসার সাহাতাব উদ্দিন জানান, শূন্য আসনটিতে ইলিক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে আগামী ১’লা ফেব্রুয়ারি।নির্বাচন সুষ্ঠু ও উৎসবমুখর করতে প্রার্থী ভোটারসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
এ আসনে ভোটার ৩ লাখ ২৪ হাজার ৭৩৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১ লাখ ৬৫ হাজার ২৩৫ জন এবং নারী ১ লাখ ৫৯ হাজার ৫০৪ জন। মোট ভোট কেন্দ্র ১২৮টি। বুথ ৮০৮ টি।