সম্পাদকীয়ঃ
মানবতা তখনই সবোর্ৎকৃষ্ট পর্যায়ে অবস্থান করে যখন তা পরিপূণর্ভাবে যথাযত স্থানে প্রয়োগ করা যায়। অন্যথায় মানবতা কথাটির প্রকৃত কোনো অর্থ প্রকাশ পায় না। সবার অন্তরে যেমন মানবতা বিরাজমান থাকে না তেমনই সব ক্ষেত্রে মানবতার বহিঃপ্রকাশ ঘটানো ঠিক নয়। মানুষ থেকে মানবতার সৃষ্টি আবার মানুষ দ্বারাই সেই মানবতার ধ্বংস করা হয়। সর্ব অবস্থায় একজন মানুষ অন্য একজন মানুষের সবচাইতে দুবর্ল দিকটি খুঁজে আর সময় সুযোগ বুঝে চরমভাবে আঘাত করে। তখন মানুষের গায়ে শত জোর থাকলেও মানুষ ও মানবতা হিংস্র রূপ ধারণ করে
চলমান সমাজে অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানবতার দোহাই দিয়ে চলে হাজারো নৈতিকতাবিরোধী কর্মী মানবতা শব্দের সঙ্গে গভীরভাবে যে শব্দটি জড়িয়ে আছে তা হচ্ছে নিঃস্বার্থ। কারণ কোনো ব্যক্তি যখন মানুষের কল্যাণে কাজ করে তখন তা থাকে সম্পূর্ণ স্বাথের্র বাইরে। কিন্তু বতর্মানে একেবারে স্বাথের্র বাইরে মানুষ কাজ করে তা স্থিরভাবে বলা কিছুটা বোকামির পরিচয় দেয়া হবে।
প্রত্যক্ষভাবে নিজস্ব কোনো স্বার্থ না থাকলেও পরোক্ষভাবে রয়েছে নানান ধরনের স্বার্থ বতর্মানে আমাদের দেশে মানবকল্যাণ, মানবসেবা, মানবাধিকার মানবাধিকার উন্নয়ন সংস্থা বিভিন্ন নামে যে সংগঠনগুলো ভাসমান তারা কি তাদের নিধাির্রত নীতি অনুযায়ী কাজ করছেন? না কি অন্য পথে হাঁটে তা ভাবার বিষয়।
শহরে-বন্দরে, গ্রামে-গঞ্জে কোথায়ও বাদ নেই মানবতাপ্রেমী ব্যক্তির উপস্থিতি। শুধু মুখে মুখে তারা মানবতাপ্রেমী না কি কর্মেও তার পরিচয় মিলে তা চিন্তার বিষয়।
শহর থেকে গ্রামে যেখানেই দৃষ্টি ফেলি না কেন, মানবকল্যাণ নামে যে দিকটি আমাদের চোখের সামনে ভাসে তা হচ্ছে, নিজের বা প্রতিষ্ঠানের প্রচার প্রসারের মাধ্যমে সবার দৃষ্টি আকষর্ণ করা। বড় বড় সাইনবোর্ড বিলবোর্ড লিফলেট, ব্যানার টানিয়ে মিডিয়া ডেকে মানুষকে সাহায্য করার নাম কোনোভাবেই মানবতা হতে পারে না।
মানুষ আজ তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত। ১৯৭১ সালে রক্তক্ষয়ী নয় মাস যুদ্ধ করেছিল অধিকার আদায়ের জন্য তা সম্ভব হলেও আজ তা সম্ভব হচ্ছে না। তবে সবাই বঞ্চিত নয় ক্ষমতা ও অথের্র জোরে অনেকেই কিনে নিয়েছে তাদের নিজস্ব অধিকার। যাদের ক্ষমতার কাছে বিক্রি হচ্ছে আইন ও মানবতা। চোখের সামনে যে মানবাধিকার সংস্থাগুলো ঘুরে বেড়ায় তার অধিকাংশই অচল বলা যায়। মানুষকে অধিকার থেকে বঞ্চিত হতে দেখেও তারা একদম নীরব। আবার এই সমস্ত সংস্থার সাইনবোর্ড বানিয়ে মতিঝিল ফকিরাপুল ধানমন্ডির মতো জায়গায় একটি অফিস ভাড়া করে নিয়ে হরহামেশাই প্রান্তিক জনপদে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করে যাচ্ছে আর নিজের আখের গোছানো নিয়ে ব্যাস্ততার সহিত মানবকল্যানে সময় পার করছে এমনকি এই সমস্ত সংস্থার চেয়ারম্যান কখনো মানবাধিকারের চেয়ারম্যান, আবার কখনো এ্যাডভোকেট না হয়েও এ্যাডভোকেট, আবার কখনো ইনকাম ট্যাক্স কর্মকর্তা আবার কখনো ডিগলারেসন বিহীন পত্রিকার সম্পাদক, এমন কি সরকারের ছায়া সরকার হিসেবে পরিচয় প্রদান করতেও দিধাবোদ করে না। চা ওয়ালা ফেরিওয়ালা, পানের দোকানদার, হকার এমনকি সুইপারকে পর্যন্ত সংস্থার কার্ড প্রদান করেন শুধু অর্থের বিনিময়ে এমনকি কোন প্রকার শিক্ষাগত যগ্যেতা না থাকলেও চলে শুধু কয়েক হাজার টাকা গুনলেই মিলে যায় জেলা পর্যায় থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় কমিটির পরিচয়ধীন কার্ড এটাই কি মানবাধিকার সংস্থার কাজ? মানবতার আড়ালে কার্ডবানিজ্য আর বিশাল সিন্ডিকেট চক্রের পরিচালক বুনে যাওয়া ছাড়া আর কিছুই না।
কিছু কিছু মানুষ সমাজে নিজের প্রভাব বিস্তার করার জন্য উজ্জ্বল আলোর ঝলকানিটুকু নিভিয়ে ঘুটঘুটে অন্ধকার পরিবেশ তৈরি করে নিজে দূরে অবস্থান করে তার স্বাদ উপভোগ করে। সমাজকে অযথা দোষারোপ করে লাভ কি? আমাদের সমাজ কোনো সময়ই নোংরা ছিল না এমন কি এখনও নোংরা নয়। নোংরা হচ্ছে সমাজে বসবাসকারী এক শ্রেণির মানুষের বিবেকবোধ, মানসিকতা, নৈতিকতাবোধ
তারা তাদের সামনে সব কিছুকেই নিজের বলে দাবি করতে চেষ্টা করে। সবের্ক্ষত্রেই তাদের অস্তিত্ব খাটাতে তারা সবর্ত্র প্রস্তুত থাকে। মুখে হাজারো মানবতাবাদী কথা থাকলেও অন্তরে থাকে জঘন্যতম কিছু গোছালো মানবতাবিরোধী পরিকল্পনা, যা তারা সুযোগ বুঝে যথাথর্ স্থানে প্রয়োগ করে থাকে। সমাজের কিছু অংশে যখন পচন ধরে তখন সবর্স্থানেই তার বাতার্ মিলে। যেখানে অথর্ ও অসচ্ছ ক্ষমতার কাছে সকল কিছু হেরে যেতে শিখেছে সেখানে মানবতা কিভাবে রেহাই পাবে?
চোখের সামনে নিজের সঙ্গে ধাক্কা খেয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ছে অসহায়রা, হাতে ধরে ওঠানোর সময়টুকো পায় না মানুষ, কিন্তু মুখে ঠিকই বলে আমি প্রকৃত মানবতাপ্রেমী একজন ব্যক্তি। তাদের লজ্জা হওয়া উচিত, কারণ তারাই চোখ থাকতে অন্ধ। চলমান সমাজে অপরাধী ও নিরপরাধী বলতে কিছু নেই সকলেই সমান। কেউ খুন করে বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে আবার কেউ ট্রাফিক আইন অমান্য করে জেল খাটছে। এমন কাযর্ক্রমের পিছনে যে জিনিসটি অগ্রণী ভূমিকা পালন করে তা হচ্ছে ক্ষমতা ও অর্থ। মানুষ আজ বড় অদ্ভুদ ধরনের, কোনো সময় সে ইমানদার ব্যক্তি, কোনো সময় জনদরদি আবার কোনো সময় পশুর চেয়ে হিংস্র।
আর কিছু তেমন ঠিক ঠাক ভাবে না করতে পারলেও লোক দেখানো অভিনয়টা খুব ভালো করে পারে। মানুষ ও মানবিকতা সম্পন্ন মানুষের মাঝে যেমন তফাৎ রয়েছে তেমনভাবে মানবতা ও লোক দেখানো মানবতার তফাৎ কম নয়। সমাজের এমন ভাসমান ব্যক্তিরা চায় নিমেষে তাদের চোখের সামনে থেকে অদ্ভুত কিছু একটা ঘটাতে যা তারা উপলব্ধির মাধ্যমে গ্রহণ থেকে বিরত থেকে উপভোগ করবে। নিজের প্রভাব বিস্তারের জন্য নিরবে অন্য প্রভাব বিস্তারকারী ব্যক্তিকে দূরে সরিয়ে দেবে। তার জন্য সবচেয়ে সহজ মাধ্যম হচ্ছে আবেগপ্রবণভাবে মানুষের কাছে যাওয়া এবাং মানবতাপ্রেমী হিসেবে সমাজের সামনে নিজেকে পরিচিত করা।
সম্প্রতি শীতকে ঘিরে নানান জায়গায় ইসলামী সম্মেলনের আয়োজন করা হচ্ছে তাতে প্রচারণার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে পোস্টার কিন্তু যে ব্যক্তি এই পোস্টারের দিকে একটু গভীরভাবে তাকাবে তার মাথা কিছুটা হলেও ঘুরবে। শত শত নাম আর তার নিচে লেখা বিশিষ্ট সমাজসেবক। এখন ভাবার বিষয় হচ্ছে মাহফিলে সামান্য কিছু অর্থ দেয়াতে তাকে কি সমাজসেবক উপাধি দেয়া ঠিক হচ্ছে?
এমনভাবে যদি সমাজসেবক, মানবতাবাদী, মানবতাপ্রেমী ব্যক্তির উদ্ভব ঘটে তবে একসময় প্রকৃত মানবতাপ্রেমী ও সমাজসেবককে চিহ্নিত করা অনেকটা কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে পড়বে।
যার ক্ষমতা ও অর্থ নেই সে প্রকৃত বিচার থেকে বঞ্চিত এ যদি হয় সমাজ, তবে মানুষ কীভাবে করবে বাস! এই ভয়ঙ্কর অবস্থা থেকে মুক্তির জন্য আইন ও বিচার বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সচেতন থাকতে হবে। যারা ক্ষমতার মাধ্যমে মানবতা ভঙ্গ করে তাদের প্রতি রাষ্ট্রের দৃষ্টি ফেলতে হবে। ভুয়া মানবধিকার সংস্থা সহ রেজিষ্ট্রেশন নিয়েও সংস্থার চেয়ারম্যান ভূয়া বাজী টাকার বিনিময়ে কার্ড বানিজ্য টাকার বিনিময়ে কমিটি প্রদান বিভিন্ন এ্যাসাইনমেন্ট দিয়ে চাঁদাবাজি সহ বিভিন্ন অপকর্মীদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন, অন্যথায় মানুষ পথে পথে প্রতারিত হবে।