কোহিনূর আলম, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোনার কেন্দুয়া পৌর শহরের কমলপুর গ্রামে কেন্দুয়া উপজেলা কৃষি অফিসের সরকারি পুরনো মালামাল কৃষি অফিসে কর্মরত অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর মো. তৌহিদুল ইসলাম তুষারের বাড়িতে মজুদ রেখে বিক্রি হচ্ছে বলে ২২ জুন একটি লিখিত অভিযোগ পেশ করা হয়।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,কেন্দুয়া পৌরসভার কমলপুর গ্রামের তাজিম উদ্দিনের ছেলে মো. তৌহিদুল ইসলাম (তুষার) কেন্দুয়া কৃষি অফিসে অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর পদে কর্মরত আছেন। তিনি সরকারি কৃষি যন্ত্রপাতি আত্মসাৎকারী এবং স্থানীয় প্রভাব বিস্তার করে কৃষি অফিসের সরকারি ধান মাড়াই পাওয়ার টিলার, মিনি পাওয়ার টিলার এবং অন্যান্য ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশ বাড়িতে মজুদ রেখে গোপনে বিক্রি করে সরকারি অর্থ আত্মসাৎ করছে। বেআইনি এবং অবৈধভাবে আর্থিক লাভবান হওয়ার মানসে এই অন্যায় কাজ করে আসছে। কৃষি যন্ত্রাংশ নিজের স্বার্থে বিক্রির ফলে সরকারি কর্মচারীর পকেট ভারী হলেও সরকার ঠিকই রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এছাড়াও অফিস সহকারী তুষার প্রকৃত কৃষকদের মাঝে সরকারের প্রদত্ত সুবিধা বিতরণ না করে তার পছন্দসই কৃষি অফিসে তালিকা দেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী জালাল জানান,গোডাউনে জায়গা খালি না থাকায় পুরনো মালামালগুলো কৃষি কর্মকর্তা নিজেই তুষারের বাড়িতে রেখেছিল। যে মালামালগুলো রাখা হয়েছিল অভিযোগের পর সেগুলো কৃষি অফিসের মাধ্যমে নিয়ে আসা হয়েছে।
উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানার সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। প্রথমে তিনি বলেন অফিস সহকারী তুষারের বাড়িতে যন্ত্রাংশগুলো আমার নির্দেশেই রাখা হয়েছে। কারণ অফিসের গোডাউনে রাখার মতো যথেষ্ট জায়গা নেই। তুষারের বাড়িতে কয়টা এবং কী কী যন্ত্রাংশ আছে জানতে চাইলে তিনি সঠিকভাবে বলতে পারেননি। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটা ভিডিও প্রচার হলে অবশ্য তিনি সঠিক তথ্য জানতে পারেন।
তিনি আরো বলেন, বৃহস্পতিবার ২২ জুন মাসিক আইন শৃঙ্খলা সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে এবং কৃষি যন্ত্রাংশগুলো অফিস সহকারী তুষারের বাড়ি থেকে নিয়ে আসা হয়েছে।
অভিযোগকারী মো. শহীদুল্লাহ বলেন, কেন্দুয়া কৃষি অফিসে কর্মরত তুষারের বাড়িতে সরকারি মালামাল গুলো দীর্ঘদিন ধরে ত্রিপল দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছিল। সময় ও সুযোগ মতো সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে ক্রমে ক্রমে বিক্রি করে আসছে। সরকারি মালামালের বিষয়ে তার সাথে কেউ কিছু কথা বলতে গেলে বলে এগুলো আমার অফিসের মালামাল। আমি যা ইচ্ছে তাই করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, বিষয়টি সঠিকভাবে যাচাই করার জন্য কেন্দুয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী জালাল স্যারের বরাবর বৃহস্পতিবার ২২ জুন লিখিত অভিযোগ করি। অভিযোগের অনুলিপি আমার ছেলে কেন্দুয়া বাজারের সার, বীজ ও কীটনাশক ব্যবসায়ী মো. শরিফুল ইসলাম কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানাকে দিতে গেলে তিনি আমার ছেলেকে বলেন তোমার বাবাকে বল আমার অফিসে আসতে। তখন আমার ছেলে আমাকে মোবাইলে কল দিলে আমি কৃষি অফিসে যাই। যাওয়া মাত্রই কৃষি কর্মকর্তা শারমিন সুলতানা আমার প্রতি রাগান্বিত হয়ে বলেন, আপনি পুরনো যন্ত্রাংশের বিষয়ে অভিযোগ করেছেন কেন? এই অভিযোগ দিয়ে আপনি কিছু করতে পারবেন? আপনার ছেলেও কিন্তু কৃষি জাতীয় পণ্যের ব্যবসা করে, ইচ্ছে করলে আপনার ছেলের ব্যবসা যে কোন সময় বন্ধ করে দিতে পারি। এই কথা শুনে সুষ্ঠু তদন্তের আশা ছেড়ে দিয়ে আমরা চলে আসি।
পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জিল্লুর রহমান বলেন, প্রায় সময়ই দেখি তুষারের বাড়িতে ঠেলাগাড়ি দিয়ে মালামাল যাওয়া আসা করে, তবে কিসের মালামাল, কার মালামাল বলতে পারব না।
ঔষধ ব্যবসায়ী শরিফুল ইসলাম, কৃষক রুবেল মিয়া ও এনামুল হক জানান, আমরা প্রায় সময়ই দেখি তুষার ও তার ভাইয়েরা মিলে কৃষি অফিসের সরকারি মালামাল তাদের বাড়িতে মজুদ রাখে এবং এও শুনতে পাই তারা পুরনো মালামাল মাঝে মধ্যে বিক্রি করে।
অফিস সহকারী তুষারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার বাড়িতে যে যন্ত্রাংশগুলো রয়েছে সেগুলো উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা স্যারের নির্দেশেই রাখা হয়েছিল। এখান থেকে কোন মালামাল বিক্রি করা হয়নি। তাছাড়া আমার বিরুদ্ধে আরো যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সঠিক নয়। মূলত সামাজিকভাবে আমাকে ও আমার পরিবারকে হেয়প্রতিপন্ন করার জন্য তিনি এই মিথ্যা নাটকটি সাজিয়েছেন। আমি এ অভিযোগের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।