মোঃ মজিবর রহমান শেখ
কোনো অফিস সপ্তাহের ১ দিন আবার কোনোটিতে অর্ধেক বেলায় চলছে দলিল নিবন্ধনের কাজ।
৩ জন সাবরেজিস্ট্রারের মাধ্যমে কোনোমতে চলছিল ৬ টি অফিস । কিন্তু তাঁদের ২জন অবসরে যাওয়ায় শূন্য হয়ে পড়ে ২ অফিসের সাবরেজিস্ট্রারের পদ। সেই থেকে সপ্তাহের ৫ কর্মদিবসে ৬ টি অফিস
সামলাতে হচ্ছে ১জন সাবরেজিস্ট্রারকে। এই পরিস্থিতি ঠাকুরগাঁও জেলায়। কোনো কার্যালয়ে সপ্তাহের ১ দিন আবার কোনোটিতে অর্ধেক বেলায় চলছে দলিল নিবন্ধনের কাজ। ফলে কাজকর্মে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ঘুরেও দলিল নিবন্ধনের কাজ করতে পারছেন না ক্রেতা-বিক্রেতা।
ঠাকুরগাঁও জেলা রেজিস্ট্রারের অফিস সূত্রে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ে ৬টি সাবরেজিস্ট্রারের অফিস রয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলায় ২টি এবং অন্য ৪টি উপজেলায় একটি করে অফিস রয়েছে। এই ৬ অফিসের দায়িত্ব ৩ জন সাবরেজিস্ট্রার সামলাচ্ছিলেন। গত জুন-জুলাই মাসে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার আবদুর রশিদ ও পীরগঞ্জ উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার রবিউল আলম অবসরে যান। এতে ঐ ২ জনের দায়িত্বে থাকা ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সদর ও ভুল্লি, পীরগঞ্জ, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার লাহিড়ী অফিসের সাবরেজিস্ট্রারের পদ শূন্য হয়ে যায়। শূন্য পদে লোক না দেওয়ায় এসব অফিসের দায়িত্ব এসে পড়ে রানীশংকৈল উপজেলার সাবরেজিস্ট্রার শফি আকরামুজ্জামানের ওপর। সেই থেকে তিনি একাই ৬টি অফিসের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আর এ দায়িত্ব সামাল দিতে শফি আকরামুজ্জামান কোনো অফিসে সপ্তাহে ১ দিন, আবার কোনো কার্যালয়ে অর্ধেক বেলা থাকছেন। এখন সদরে পুরো ১ দিনের সঙ্গে আরেক দিনের অর্ধেক বেলা, পীরগঞ্জ ও বালিয়াডাঙ্গীর লাহিড়ী হাটে পুরো ১ দিন করে আর রানীশংকৈল, হরিপুর ও ভুল্লি কার্যালয়ে অর্ধেক বেলা দলিল নিবন্ধনের কাজ চলছে। কয়েকজন দলিল লেখক জানান, ১ কর্মকর্তা ঠাকুরগাঁও জেলার ৬টি অফিসের সাবরেজিস্ট্রারের দায়িত্ব পালন করছেন। এতে কোনো কার্যালয়ে তিনি সপ্তাহে ১ দিন আবার কোনো কার্যালয়ে অর্ধেক বেলার বেশি সময় দিতে পারছেন না। ফলে কাজকর্মে নানা জটিলতা তৈরি হচ্ছে। কমে গেছে দলিল নিবন্ধনের সংখ্যা। ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার দলিল লেখক ও সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে সপ্তাহে ৩ দিনে গড়ে ৩০০টি দলিল নিবন্ধন হতো। আর এখন সেটা নেমে এসেছে ১৩০ থেকে ১৫০টিতে। ঠাকুরগাঁও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ সরকার বলেন, কর্মকর্তা না থাকায় তাঁদের সপ্তাহে ৪ দিন অলস সময় কাটাতে হচ্ছে। ঠাকুরগাঁও জেলার রানীশংকৈল উপজেলার ভবানন্দপুর গ্রামের পরেশ বর্মণের মেয়ের হঠাৎ বিয়ে ঠিক হয়েছে। এ জন্য টাকা জোগাড় করতে তিনি জমি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিলেও সাবরেজিস্ট্রার না থাকায় দলিল রেজিস্ট্রি করে দিতে পারছেন না। ফলে জমির ক্রেতা তাঁকে অর্ধেক টাকাও দিতে চাইছেন না। নিরুপায় হয়ে তিনি দাদন ব্যবসায়ীর কাছে সুদে টাকা নিচ্ছেন। ৮ আগস্ট ঢাকা থেকে ভুল্লি সাবরেজিস্ট্রার কার্যালয়ে আসেন আইয়ুব আলী। তিনি এখানে এসে জানতে পারেন সাবরেজিস্ট্রার সপ্তাহে শুধু সোমবার আধা বেলা বসেন। আইয়ুব আলী বলেন, ‘জমির মূল দলিল হারিয়ে গেছে। তাই আমি নকল (সার্টিফায়েড) তুলতে এসেছি। কিন্তু সাবরেজিস্ট্রার নাকি আসবেন ১ সপ্তাহ পর। অফিসের কাজকর্ম ফেলে এই ৭ দিন কি বাড়িতে থাকা যায়?’আগে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলা লাহিড়ী সাবরেজিস্ট্রি কার্যালয়ে সপ্তাহে ৩ দিন জমি নিবন্ধন চলত। এখন চলে মাত্র ১ দিন। এ নিয়ে বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার পাড়িয়া গ্রামের বাসিন্দা খসিউর রহমান বলেন, ৩ বার গিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করা সম্ভব হচ্ছে। এতে মানুষের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। সপ্তাহে অন্তত ৩ দিন জমি রেজিস্ট্রি চললে মানুষের ভোগান্তি কমত। ৬টি সাবরেজিস্ট্রার অফিসের
দায়িত্ব পালন করা শফি আকরামুজ্জামান বলেন, ‘একা ৬টি অফিস সামলাতে গিয়ে সমস্যা হবেই। তবু মানুষের ভোগান্তির কথা ভেবে সেবা দিয়ে যাচ্ছি। গভীর রাত পর্যন্ত কাজ করতে হচ্ছে।’ঠাকুরগাঁও জেলা রেজিস্ট্রার হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘সপ্তাহে ৫ কর্মদিবসে ৬টি কার্যালয়ের দায়িত্ব পালন করা কষ্টকর। এতে সেবাগ্রহীতারা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি। শূন্য পদে যেকোনো সময় নতুন সাবরেজিস্ট্রার পাওয়া যাবে। তখন আর এই ভোগান্তি থাকবে না।’