নিজস্ব প্রতিবেদকঃ
ইন্সপেক্টর জেনারেল অব পুলিশ, বাংলাদেশ চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বিপিএম (বার), পিপিএম বলেছেন, বঙ্গবন্ধু ছিলেন জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা এবং স্বাধীনতার রূপকার। বঙ্গবন্ধু ও বাংলাদেশ এক অভিন্ন সত্ত্বা। বঙ্গবন্ধুই বাংলাদেশ।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জীবন ও কর্ম মানেই হলো বাঙালির স্বাধিকার আন্দোলন ও স্বাধীনতা অর্জনের সোনালী ইতিহাস। বঙ্গবন্ধু তাঁর ৫৫ বছরের জীবনকালের প্রায় ছয় ভাগের এক ভাগই কারাগারে কাটিয়েছেন।
তিনি আজ বিকালে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের আয়োজনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাতবার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন।
ডিএমপি কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বিপিএম(বার), পিপিএম এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বীর বিক্রম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের পরিচালক (এআইজি) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান।
অনুষ্ঠানে ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানগণ ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
আইজিপি বলেন, বঙ্গবন্ধু তাঁর সারাটা জীবন বাঙালি ও এই জনপদের জন্য উৎসর্গ করে গেছেন। জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও এ জাতির জন্য তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা নেতা।
তিনি বলেন, আজ বাংলাদেশে যে উন্নয়ন কার্যক্রম তার ভিত্তি বঙ্গবন্ধুর হাতেই হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু তনয়া মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বিগত এক দশকের অধিক সময় ধরে দেশের প্রত্যেক সেক্টরে অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বাংলাদেশ এখন বিশ্বে রোল মডেল। বাংলাদেশ আজ তথাকথিত বটমলেস বাস্কেট থেকে এশিয়ার ‘ইমার্জিং টাইগারে’ রূপান্তরিত হয়েছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ‘রূপকল্প ২০৪১’ বাস্তবায়নে আধুনিক স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আগামী প্রজন্মকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। উন্নত দেশের নাগরিক হওয়ার স্বপ্ন তোমাদেরকে বাস্তবায়ন করতে হবে। তোমাদের হাত ধরেই গড়ে উঠবে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ ও বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের ‘সোনার বাংলা’।
মুখ্য আলোচক বলেন, বঙ্গবন্ধু দেশকে ভালবাসতেন, দেশের মানুষকে ভালবাসতেন ।১৯৭৫ সালের ১৫ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু রাজারবাগে এসেছিলেন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আহবানে সাড়া দিয়ে দেশমাতৃকাকে ভালোবেসে পুলিশ সদস্যরা তাদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। তারা দেশাত্মবোধ থেকে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রথম বুলেট ছুঁড়েছে। তিনি বলেন, পুলিশ প্রথম যে বুলেট ছুঁড়েছে সেই বুলেটের শব্দ সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
সভাপতির বক্তব্যে ডিএমপি কমিশনার বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের ওপর যে নৃশংস হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছিল তার উদ্দেশ্য ছিল বাংলাদেশকে নেতৃত্ব শুন্য করা। নেতৃত্ব শুন্য করতে পারলেই বাংলাদেশের পাকিস্তানি দোসররা এদেশকে আবার পাকিস্তানের অংশ করতে পারতো।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে হৃদয়ে ধারণ করে তা বাস্তবায়ন করতে পারলে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যে স্বপ্ন বাস্তবায়ন করেছেন আমরা তাঁর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের সারথি হতে পারবো।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদত বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবস ২০২৩ উপলক্ষে বাংলাদেশ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর কর্তৃক ঢাকাস্থ বিভিন্ন পুলিশ ইউনিটে কর্মরত পুলিশ সদস্য ও সিভিল স্টাফদের সন্তানদের মধ্যে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
৩টি ক্যাটাগরিতে কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। ক-গ্রুপ (প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি), বিষয়- ৭ মার্চ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১; খ- গ্রুপ (ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি), বিষয়- বঙ্গবন্ধুর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ এবং
গ- গ্রুপ (একাদশ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি), বিষয়- বঙ্গবন্ধুর ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’।
এছাড়া, বাংলাদেশ পুলিশের সকল ইউনিটে কর্মরত পুলিশ সদস্য ও সিভিল স্টাফদের মধ্যে রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়।
এএসপি হতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জন্য রচনার বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে স্মার্ট পুলিশের ভূমিকা’,
এসআই/সার্জেন্ট হতে ইন্সপেক্টদের জন্য রচনার বিষয় ছিল ‘বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলা ও বিচার: জাতির দায় মুক্তি’ এবং কনস্টবল, নায়েক ও এএসআই-দের জন্য রচনার বিষয় ছিল ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’-তে পুলিশ। সিভিল স্টাফদের জন্য রচনার বিষয় ছিল- ‘খোকা থেকে বঙ্গবন্ধু’।
অনুষ্ঠানে ‘দিশারী’ নামক গ্রন্থের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কালরাতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে দায়িত্বরত অবস্থায় শহীদ এএসআই সিদ্দিকুর রহমানের পুত্র মুস্তাফিজুর রহমানকে সম্মাননা স্মারক প্রদান করা হয়।
আইজিপি অন্যান্য অতিথিদের সাথে নিয়ে বিভিন্ন গ্রুপে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট শাহাদাতবরণকারী বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।