কোহিনূর আলম, কেন্দুয়া (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃ
নেত্রকোণার কেন্দুয়ায় দুদিনের টানা ভারি বর্ষণে প্লাবিত হয়েছে উপজেলার বিভিন্ন জলাশয়, কৃষিজমি, বীজতলা ও আবাসিক এলাকা । ১১৮০টি পুকুরের মাছ ভেসে গেছে । তলিয়ে গেছে অসংখ্য আমনের খেত । ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছে মৎস্যচাষি ও কৃষকরা । সবজি চাষিদেরও সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে ।
জলাবদ্ধতায় পৌরশহরের কান্দিউড়া, শান্তিবাগ, আরামবাগ, কমলপুর ও সাউদপাড়া সহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে গেছে । পানি উঠেছে বাসাবাড়ি, রাস্তা ঘাট ও দোকানে । বাসায় পানি ওঠায় অনেকের রাত কেটেছে নির্ঘুম । আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র ভিজে বাসিন্দাদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে । সীমাহীন ক্ষতি হয়েছে ঢাকা স্ট্যান্ডার্ড বেকারির । বেকারিতে পানি ওঠায় চিনি, আটা, ময়দাসহ বিভিন্ন মালামাল ভিজে একাকার হয়েছে । রাস্তাঘাট ও গাছপালারও ক্ষতি হয়েছে । স্থানীয় সংসদ সদস্য অসীম কুমার উকিল এলাকার সার্বিক খোঁজখবর রাখছেন বলে জানা গেছে৷ । এলাকার পরিস্থিতি স্বচক্ষে দেখতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী জালাল বিভিন্ন এলাকায় পরিদর্শন করেছেন ।
পৌর সভার সাউদপাড়ার বাসিন্দা ও কেন্দুয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক মোঃ লিয়াকত আলী চৌধুরী কাজল বলেন, টানা বর্ষণে সাউদপাড়ার প্রায় ৭০ শতাংশ বাসায় পানি ওঠেছিলো । আজও অনেক বাসায় ও এলাকার রাস্তায় পানি রয়েছে । আমি মনে করি যথেষ্ট ড্রেনেজ ব্যবস্থার অভাব, অপরিকল্পিত নগরায়ন ও আমাদের অসচেতনতাই এর জন্যে দায়ী । তবে পৌর কর্তৃপক্ষকেও এ বিষয়ে আরো দায়িত্বশীল হতে হবে । এ শহরকে সুন্দর ও বাসযোগ্য করে তোলা প্রতিটি নাগরিকের চাওয়া ।
উপজেলার মৎস্যচাষি মোঃ জসীম উদ্দিন খোকন জানান, ৫৮ কাঠা পুকুরের পাড় ভেঙে ও ডুবে সব মাছ বেরিয়ে গেছে । ১৫/১৬ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে জানান । এছাড়াও রোয়াইলবাড়ী আমতলা ইউনিয়নের গামরুলী পুরান বাড়ী গ্রামের তাইজুল ইসলাম ও লিটন মিয়া তাঁদের দুটি পরিবারের ফিসারী পানির নীচে তলিয়ে গেছে । এতে ক্ষয় ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১৯/২০ লক্ষ টাকা ।
আইথর গ্রামের এডভোকেট আল মামুন কোকিল জানান, তাঁর ২০ কাঠা জমিতে পুকুর ছিল সব পানির নিচে । এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১০ লাখ টাকা । এমন হাজারো মৎসচাষি পরিবারের স্বপ্ন ভেঙে বিষাদের আবহ বইছে । একই অবস্থা বিরাজ করছে হাজার হাজার কৃষক পরিবারে ।
উপজেলা কৃষি অফিসার শারমিন সুলতানা জানান, প্রাথমিক অবস্থায় ৩ হাজার ৭ শত ৫০ হেক্টর ধানের জমি সম্পূর্ণ নিমজ্জিত হয়েছে । সবজির বীজতলা প্রায় ৩০ টি পানিতে তলিয়ে গেছে । পানি যদি দুয়েকদিনের মধ্যে না কমে তাহলে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষকরা ।
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য অফিসার আজহারুল আলম জানান, বিভিন্ন ইউনিয়ন থেকে প্রায় ১১৮০ টি পুকুর ডুবে যাওয়ার খবর পেয়েছি, এতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪ শত কোটি টাকা । ক্ষতিগ্রস্তদের নামের তালিকা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠাবো ।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার কাবেরী জালাল জানান, টানা ভারি বর্ষণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে অনেক পুকুর, আমন ফসলের জমি, সবজি খেত ডুবে গেছে । কয়েকটি স্থানে রাস্তা ধসে গেছে ।