শরীয়তপুর সংবাদদাতা:
গত ২৪ এপ্রিল মাদারীপুর জেলার শিবচর উপজেলার কাদিরপুর এলাকা থেকে কামরুল চোকদার (২৯) নামের এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে শিবচর থানা পুলিশ। নিহত কামরুল চোকদার শরীয়তপুর জেলার জাজিরা উপজেলার বিকেনগর ইউনিয়নের সরদারকান্দি গ্রামের দাদন চোকদারের ছেলে। নিহতের পরিবারের দাবি, পাওনা টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে তাকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। পুলিশ জানিয়েছে, মামলার রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত চলছে।
নিহতের পরিবারের ভাষ্য, ২৩ এপ্রিল রাতে অজ্ঞাত এক ব্যক্তি ফোন করে কামরুল চোকদারকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। এরপর সারারাত সে নিখোঁজ ছিল। ২৪ এপ্রিল সকালে একটি ব্রিজের নিচ থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিবারের ধারণা, প্রতিবেশী এক যুবকের সঙ্গে আর্থিক বিরোধ থেকেই এ হত্যাকাণ্ড ঘটে থাকতে পারে।
এ ঘটনায় নিহতের বাবা দাদন চোকদার শিবচর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে অভিযোগ উঠেছে, এই মামলায় জমি-জমা সংক্রান্ত পুরনো বিরোধ এবং ভিন্ন একটি মামলার বাদী হওয়ায় সামিউল ইসলাম জীমকে ষড়যন্ত্র করে আসামি করা হয়েছে।
সামিউল ইসলাম অভিযোগ করেন, “১৮ এপ্রিল আমার বাগানে ঢুকে একটি দল ভাঙচুর, লুটপাট ও ক্ষতিসাধন করে। আমি জাজিরা থানায় মামলা করি। এই মামলায় লিমন নামের একজন আসামি হয়। এরপর দেখা যায়, লিমন হত্যাকাণ্ডের পর দাদন চোকদারের সঙ্গে সারাক্ষণ ছিল এবং মামলার কার্যক্রমে সক্রিয় ভূমিকা নেয়। তার ইন্ধনেই আমাকে অন্যায়ভাবে এই হত্যা মামলায় জড়ানো হয়েছে।”
স্থানীয়ভাবে ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি কল রেকর্ডেও দাবি করা হয়, সামিউল ইসলাম পূর্বের একটি মামলার বাদী হওয়ার কারণেই তাকে হত্যা মামলায় আসামি করা হয়েছে। রেকর্ডে একজন বলছেন, সামিউলের মামলায় লিমনের নাম না থাকলে, তাকে এই মামলায় জড়ানো হতো না।
এদিকে স্থানীয়দের মধ্যে অনেকে দাবি করেন, নিহত কামরুল চোকদারের সঙ্গে লিমনের পূর্ব বিরোধ ছিল। ১১ মার্চ কামরুল চোকদার লিমনপন্থী ছোরহাব মাদবর (৪৭) কে মারধর করেন। এ ঘটনায় ছোরহাবের ভাতিজা কামরুজ্জামান মাদবর বাদী হয়ে একটি মামলা দায়ের করেন, যাতে নিহত কামরুজ্জামান চোকদার ছিলেন ১০ নম্বর আসামি।
বিষয়টি নিয়ে লিমনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটিও বন্ধ পাওয়া গেছে।
নিহতের বাবা দাদন চোকদার বলেন, “আমার ছেলের সঙ্গে ৮৫ হাজার টাকা নিয়ে সিয়াম সরদারের বিরোধ ছিল। রাতে সে নিখোঁজ হয়, সকালে তার লাশ পাওয়া যায়। আমার ধারণা, এই হত্যাকাণ্ডে তারাই জড়িত।”
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রতন শেখ বলেন, “মামলায় ৫ নম্বর আসামি রানা সরদারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তদন্ত চলমান রয়েছে। প্রকৃত দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে।”
এ বিষয়ে শরীয়তপুর বার কাউন্সিলের সদস্য এড. সানাল মাদবর বলেন, “ক্লুলেস মামলায় কারো নাম উল্লেখ করে আসামি করা হলে নির্দোষ ব্যক্তিরাও হয়রানির শিকার হতে পারেন। পূর্ণাঙ্গ তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে জমা না দেওয়া পর্যন্ত কেউ দোষী প্রমাণিত নয়। পুলিশকে অবশ্যই এসব ক্ষেত্রে সতর্ক থেকে নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে হবে।”
প্রকাশকঃ ফারজানা , সম্পাদকঃ আলমগীর মন্ডল, যোগাযোগ : ০১৭১১২৯০৯৬১