নিজস্ব প্রতিবেদকঃ “হয় বিষের বোতল দেন। না হলে জমিতে পানির ব্যবস্থা ব্যবস্থা করে দেন। চোখের সামনে এতো কষ্টের ফসল জ¦লে পুড়ে নষ্ট হচ্ছে। ঋণ করে আবাদ করেছি। কিন্তু পানির অভাবে তে চোখের সামনে নষ্ট হয়ে যাবে? এই তিপূরণ কে দিব। কার কাছে গিয়া বিচার দিবো। এখন আমরা কি করমু।
এসব কথা বলে হাউমাউ করে আর্তনাদ করছিলেন-ভাবিচা ইউনিয়নের ধর্মপুর এলাকার কৃষকরা। তারা চোখের পানি টলটল করে ফেলে।
অভিযোগ করেন ধর্মপুর গ্রামের নূরুন নবী মন্ডলের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, আমাদের গ্রামের আব্দুল হামিদ মোল্লার ছেলে আজিজুল হক তার স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আজ এই স্কীমের জমিগুলো পানির অভাবে মরে যাচ্ছে। যদিওবা কিছু কিছু জমি বাঁচবে তাও পরিমান মত পানির না পাওয়ায় ফলন অনেক কম হবে। মোস্তাফিজুর রহমান অভিযোগ করে আরো বলেন, এই স্কীমে আমাদের প্রায় ৪০ বিঘা জমি রয়েছে। এই স্কীম এক সময় আমার বড় ভাই চালিয়েছিল মাত্র ৮শ টাকা করে, আজিজুল হকের বাবাও এই স্কীম চালিয়েছিল ৮শ টাকা প্রতি বিঘায়। তারপরেও নগদ টাকা জমা থাকতো। বিগত দুই বছর যাবত সে কোন কমিটি ছাড়াই জোর করে কিছু লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এককভাবে ডিপটিউবওয়েল চালিয়ে যাচ্ছে। এবার আমরা প্রথমে ১ হাজার ৫শ টাকা করে দিয়েছিলাম। পরে আজিজুল হকের কথা মত আরো ২শ টাকা মোট ১ হাজার ৭শ টাকা প্রতি বিঘায় আমরা দিয়েছি। অথচ আমরা ঠিক মত পানি পাই নাই। এখন শেষ মুহুর্তে তো সে ডিপটিউবওয়েল বন্ধ করে দিয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষনা এক ইঞ্চিও জমি যেন অনাবাদী না থাকে। কিন্তু এই স্বেচ্ছাচারী আজিজুল হকের কারণে আজ তৈরী জমির ধান পানির অভাবে জলে পুড়ে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর ভিশন ব্যর্থ হচ্ছে। এখানে প্রায় ৩বিঘা রয়েছে। এত বড় স্কীম না করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আমার আকুল আবেদন এখানে এসটিডাবিøউ বসানোর অনুমতি দেওয়া হোক।
আরেক কৃষক একরামুল হক একই সুর দিয়ে বলেন, এই স্কীমে মোট ২শ ৮০ বিঘা আবাদ হচ্ছে। প্রতি বিঘা ১ হাজার ৭শ টাকা করে নিলে মোট আয় হয় ৪ লক্ষ ৭৬ হাজার টাকা। এত টাকা বিদ্যুতের বিলসহ অন্যান্য খরচ হয় না। অথচ টাকা নেই বলে ডিপ বন্ধ করে গিয়েছে। পুড়া ধান কিছুটা বাঁচানোর জন্য ডিপের কার্ডে নিজে টাকা তুলে কোন কোন কৃষক পানি নিয়ে শেষ চেষ্টা করছেন।
আরেক কৃষক মোশারফ হোসেন বলেন, গত দুই বছর আগে ডিটটি আমি নিজে পরিচালনা করেছি। প্রতি বিঘা মাত্র ১ হাজার টাকা করে নিয়েছিলাম। তার পরেও সুষ্ঠুভাবে আবাদ করে কৃষকরা ধান গোলায় তুলতে পেরেছিল। এই ডিটটি যখন আমার কাছ থেকে নেওয়া হয় তখন আওয়ামীলীগের কিছু দূর্নীতিবাজ নেতার সমর্থনে লাঠিয়াল বাহিনী নিয়ে এসে ডিপটি দখল করে নেয়। কোন কৃষক এই স্বেচ্ছাচারী আজিজুল হকে চায় নাই। জোর করে ইচ্ছে মত টাকা নিয়ে ডিপটি চালাচ্ছে। আমরা কৃষকরা জমি নিয়ে পড়েছি বিপাকে। আমরা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলছি, বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হোক। যাতে আগামী মৌসুমে আমার ধান জ¦লে পুড়ে শেষ না হয়ে যায়।
ভাবিচা ইউনিয়ন উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মেহেদী হাসান জানান, স্কীমটি অনেক বড় হওয়ায় কৃষকদের কিছুটা সমস্যা হয়েছে। যদিও কাগজে কলমে ২শ ৮০ বিঘা কিন্তু বাস্তবে ৩শ বিঘারও উপরে জমি রয়েছে। তা ছাড়া বর্তমানে যে তাপপ্রবাহ চলছে তাতে এক-দুদিন পর পর জমিতে পানি দিতে হচ্ছে। স্কীম বড় হওয়ায় সব জমিতে কভার করতে পারছে না। আর বেশী টাকা নেওয়ার বিষয়টি কেউ আমার কাছে অভিযোগ করেনি।
উপজেলা কৃষি অফিসার কামরুল হাসান জানান- আমার কাছে লিখিত কোন অভিযোগ নেই, তবে মৌখিক অভিযোগে প্রেক্ষিতে আমি বিএমডিএ এর প্রকৌশলীর সাথে যোগাযোগ করেছি। তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করবেন। অপারেটর আজিজুল হক নাকি বলেছেন, যে দিকের জমিতে পানির সমস্যা সেদিকের পাইপ ফেটে যাওয়ায় পানির সমস্যা হয়েছে। তবে আজ কালের মধ্যে যেন জমিতে পানি যায় সে ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন।
বিএমডিএ এর প্রকৌশলী হারুন-অর-রশিদ জানান, আমার কাছে কোন অভিযোগ নেই। আমি উপজেলা কৃষি অফিসারের মাধমে বিষয়টি জানতে পেরে অপারেটরের সাথে কথা বলেছি। পাইপের সমস্যা ছিল, সমস্যার সমাধান করে আজ কালের মধ্যে যে সমস্ত জমিতে পানি লাগবে সেই সমস্ত জমিতে পানি দেবে। ধানের কোন সমস্যা হয়নি। কিছু কিছু জমিতে আর একটি সেচ লাগবে এই টুকুই।