1. alomgirmondol261@gmail.com : দৈনিক আজকের খোলা কাগজ :
বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫৬ পূর্বাহ্ন

বাহুবলে হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সামসুল হক

প্রতিবেদকের নাম:
  • প্রকাশিত: রবিবার, ৯ জুন, ২০২৪
  • ৮১ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ আলোচিত হত্যা ও চাঁদাবাজি মামলাসহ একাধিক মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি হওয়া স্বত্ত্বেও দীর্ঘদিন থেকে বহাল তবিয়তে রয়েছেন হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলার অলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সামসুল হক। বর্তমান সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার আব্দুল ওয়াহেদ এর সাথে ভালো সম্পর্ক থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি উপজেলা শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তারা। এমনকি মামলার তথ্য গোপন করে নিয়েছেন তারা।

মো. সামসুল হক (৪৫), বাড়ি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার ৭নং ভাদেশ্বর ইউনিয়নের পূর্ব জয়পুর গ্রামে। তিনি ওই গ্রামের আব্দুর রাজ্জাকের পুত্র। কর্মরত আছেন উপজেলার ১৫ নম্বর অলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। পদবী সহকারী শিক্ষক। সবকিছুই ঠিকঠাক চলছে ।নেই কোনো বিভাগীয় তদারকি, জন্ম দিতেছেন একের পর এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার।

একাধিক শিক্ষক ও স্থানীয়রা জানান, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা মানে পুরো প্রতিষ্ঠানের বদনাম। ওই সহকারী শিক্ষক নিয়মিত স্কুলে ছাত্র-ছাত্রীকে পাঠ দান করান না, প্রধান শিক্ষক মেনেজ করে স্কুলে পাঠদানের সময় বিভিন্ন কোম্পানির সেন্টিকেট জন্য ঘুরে বেড়ান।স্কুলে সঠিক সময় উপস্থিত না হয়েও ছুটির আগেই চলে যাওয়া এবং স্কুলের চেয়ে তার ব্যক্তিগত বাণিজ্যকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া স্কুল ফাঁকি দিয়ে সঠিক সময়ে স্কুলে না আসা।
শিক্ষক সমাজ যদি এমন হয় তাহলে জাতি সমাজ কোথাই যাবে। এসব দূর্নীতি চাঁদাবাজ শিক্ষকদের কঠোর শাস্তি হওয়া দরকার। তাহলে অন্য শিক্ষকরা এমন কর্মকান্ডে জড়িত হতে সাহস পাবে না।

চলাচলে রিকশা আর সাইকেলই যার ছিলো ভরসা, সেই প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হয়েই সম্পদের পাহাড় গড়েছে। শহরে ও এলাকায় নিজের ও স্ত্রীর , পিতার নামে রয়েছে বড় দোকান, বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার আর বিলাস বহুল বাড়ি- ফ্ল্যাট, জমিসহ অর্ধশত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন কয়েক বছরের মধ্যেই। রয়েছে বিভিন্ন কোম্পানির ডিলার শিপ ও স্থানীয় মিরপুর বাজারে মেসার্স মা এন্টার প্রাইজ নামে রড সিমেন্ট এর দোকান সহ এই সহকারী শিক্ষকের বিত্তবৈভবের মালিক হওয়ার নেপথ্যে দরিদ্র মানুষের টাকা আত্মসাতসহ নানা দুর্নীতি এবং অনিয়মের অভিযোগ। এছাড়াও উপজেলার নতুন বাজারে ওমেরা সিলিন্ডার কোম্পানিতে দৈনিক শ্রমিকদের জন প্রতি প্রায় ৩০০ টাকা করে দেওয়া হয় সেই শ্রমিকদের বেতন থেকে মেসার্স মা এন্টার প্রাইজ সিন্ডিকেট এর মাধ্যমে জনপ্রতি রোজ ৫০ টাকা করে সেন্টিকেট নেয়।কারো কারো মুখে শোনা যাচ্ছে অলিপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সামসুল হক সে এই দালাল চক্রের সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। সে এলাকার নিম্নবিত্ত পরিবারে সন্তান প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হয়ে কোটিপতির খাতায় নিজের নাম সামসুল হক। রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি, মারামারি, সন্ত্রাসী হামলা সহ একাধিক মামলা।

মামলার বিবরণ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে,
বাহুবল উপজেলার নতুন বাজার এলাকায় স্থাপিত ওমেরা গ্যাস সিলিন্ডার কোম্পানির বিভিন্ন মালামাল টেন্ডারের মাধ্যমে ক্রয় – বিক্রয়কে কেন্দ্র করে ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ সালে পূর্ব জয়পুর গ্রামের সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার ও তার সহযোগীরা প্রতিপক্ষ চারগাও গ্রামের তাজুল ইসলাম ও তার সহযোগীদের সঙ্গে স্থানীয় মিরপুর বাজারে মারাত্মক দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে মারামারিতে লিপ্ত হয়। সন্ধ্যা অনুমান ৬.৩০ ঘটিকা হতে রাত অনুমান ৯.৩০ ঘটিকা পর্যন্ত সংঘর্ষ চলাকালে সুজন মিয়া নামে এক ব্যক্তি কাঁচা বাজার হাতে নিয়ে পরিবারের জন্য দৈনন্দিন বাজার সদাই করে নিজ বাড়িতে ফিরার জন্য রওয়ানা দিলে উভয় পক্ষের মারাত্মক আক্রমনের শিকার হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনায় পিআইবি ও সিআইডি মামলা তদন্ত করে সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার কে চার্জশিট ভুক্ত আসামি করে। মামলা নং ১৬৯/২০১৬ ।
এছাড়া উক্ত সংঘর্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ আনতে পুলিশ সদস্য সহ আহত হয়েছে এবং পুলিশ ৩৬৭ রাউন্ড শর্টগানের কার্তুজ ফায়ার করে ও ১৮ টি কাঁদানে গ্যাস সেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ ঘটনায় পুলিশ আক্রান্ত হওয়ায় পুলিশ বাদী হয়ে সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার সহ উভয় পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে। মামলা নং ০৭/২০১৬।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বাহুবল উপজেলার শ্রীমঙ্গল রোডের উত্তর দিক ইউরোটেক্স কোম্পানির মালিকানাধীন জমিতে মাটি ভরাট কাজ চলাকালীন সময়ে পূর্ব জয়পুর গ্রামের সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার তার সহযোগীদের নিয়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে কাজে বাধাঁ দেয় এবং ১০ লক্ষ্য টাকা চাঁদা দাবি করে। এ ঘটনায় সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার কে ১ম আসামি করে তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে কোম্পানির এমডি চাঁদাবাজি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং ২৬৮/২০১৬ । উক্ত মামলায় পূর্ব জয়পুর গ্রামের সামছুল হক ওরফে সামসু মাষ্টার প্রায় তিন মাস কারাভোগের পর হাইকোর্টে রিট করে জামিনে মুক্ত হয়ে আসেন। এছাড়া তার বিরুদ্ধে আরো মামলার নাম্বার গুলো হল- জিআর মামলা নং- ১১/২০০৮ বাহুবল তারিখ: ২৫/০৭/২০০৮
মামলা নং ০৩/২০১৪ বাহুবল তারিখঃ ২/০৮/২০১৪, মামলা নং ১৬৯/২০১৬ বাহুবল তারিখ ১২/ ০৯ / ২০১৬ ( হত্যা মামলার পিবিআই ও বিভাগীয় সিআইডি চার্জশিট ভুক্ত ২০ নাম্বার আসামি), মামলা নং ২৬৭/২০১৬ বাহুবল ( এই চাঁদাবাজি মামলায় প্রায় ২ মাস কারাভোগের পর হাইকোর্টের রিট করে জামিনে আসছেন) , মামলা নং ১০/২০১৫ বাহুবল তারিখঃ১২/০৭/২০১৫ , মামলা নং ০৭/ ২০১৬ বাহুবল তারিখঃ ৫/০৯/২০১৬ ( পুলিশ বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে, বর্তমানে চার্জশিট ভুক্ত আসামি) , মামলা নং ১৮/২০১৬ তারিখঃ ২৯/১২/২০১৬, মামলা নং ৭/২০১৭ বাহুবল তারিখঃ ১৪/০১/২০১৭।

জানা গেছে, শামসুল হক সরকারি চাকুরির শৃঙ্খলা ভঙ্গ করা সহ বিভিন্ন প্রায় ৮ টি মামলার অভিযোগ থাকলেও তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেনি জেলা শিক্ষা অফিস।

বর্তমানে উচ্চ আদালতের নির্দেশ ও জামিনের তথ্য গোপন করে প্রায় ১০ বছর যাবৎ তিনি চাকরিতে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। কিন্তু চাকরি বিধি অনুযায়ী, আত্মসমর্পণের পর জামিনে মুক্তি লাভ করলেও সাময়িক বরখাস্ত থাকার কথা। বিধি অনুযায়ী তার সাময়িক বরখাস্ত হওয়ার কথা থাকলেও হতে হয়নি। এমনকি হত্যা, চাঁদাবাজি মামলাসহ একাধিক মামলার বার বার আদালতে দাখিলকৃত চার্জশিটে নাম থাকলেও পড়তে হয়নি কোন বিড়ম্বনায়। অভিযোগ আছে, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার সঙ্গে যোগসাজসে পুরো বিষয়টিই ধামাচাপা দিতে সক্ষম হন সহকারী শিক্ষক শামসুল হক । এদিকে, ধামাচাপা পড়ে যাওয়া বিষয়টি দীর্ঘ প্রায় ১০ বছর পর ফাঁস হয়েছে।

আটক ও ঘটনার সত্যতা নিশ্চিতের জন্য বাহুবল উপজেলার অলিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সাজিদুর কে একাধিক বার মুঠোফোনে কল করলেও কোনো বক্তব্যে দিতে তিনি রাজি না।

এদিকে, আলোচিত হত্যা ও চাঁদাবাজি মামলাসহ একাধিক মামলার সব অভিযোগ ও চার্জশিট পত্রেই শিক্ষক সামসুল হকের নাম থাকলেও না জানার ভান করে রহস্যজনক কারণে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াহেদ বিষয়টি ধামাচাপা দিয়ে রাখেন।

এ ব্যাপারে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলীকে একাধিক বার মুঠো ফোন দিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

হবিগঞ্জ জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. গোলাম মাওলা এ প্রতিবেদককে বলেন, বিষয়টি জানা ছিল না। শিক্ষক সামসুল হকের বিরুদ্ধ হত্যা ও চাঁদাবাজি মামলার কপি এবং কারাগারে থাকার বিষয়টি দেখে সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র পাওয়ার পরই শিক্ষক সামসুল হক কে সামরিক বরখাস্ত করা হবে। একই সঙ্গে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে। তথ্য গোপন করায় তার বিরুদ্ধে অন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় উপ পরিচালক মোঃ জালাল উদ্দিন কে একাধিক বার মুঠোফোনে কল করলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

আরো সংবাদ পড়ুন

পুরাতন সংবাদ পড়ুন

সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি রবি
 
১০১১১২১৩১৪১৫
১৬১৭১৮১৯২০২১২২
২৩২৪২৫২৬২৭২৮২৯
৩০  
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
Developer By Zorex Zira